সময় কোন অসীম সম্পদ নয়। আপনার কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব, বাড়ির দায়িত্ব এবং যদি আপনি একজন ছাত্র বা শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তবে সেই সাথে স্কুল বা কলেজের পড়াশোনা সামলানো অনেক কঠিন একটি বিষয় হয়েযায়। তবে যাই হয়ে যাক না কেন আপনার কাছে সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা সময় থাকবে আপনার সমস্ত কাজকর্ম করার জন্য। যেমন আপনার নিজের ব্যক্তিগত কিছু সময়ম পরিবারকে দেয়ার জন্য কিছু সময় এইরকম আর কিছু বিষয়। কিন্তু আপনি যদি আগে থেকেই সবকিছু প্ল্যান করে রাখেন এবং আপনার সারাদিনের ২৪ ঘন্টা সময়কে বুদ্ধির সাথে খরচ করেন তবে আপনি একসাথে অনেক কিছু করতে পারবেন এবং এরপরও দেখবেন আপনার কাছে অনেক ফ্রি টাইম আছে অন্য কাজ করার জন্য। আমি আপনাকে ৭টা টিপস এবং স্ট্রাটেজি বলে দিবো যা আপনি অনুসরণ করতে পারেন, যাতে আপনি আপনার নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার আগেই আপনার কাঙ্খিত কাজ শেষ করে ফেলতে পারেন এবং সেই সাথে আপনি আপনার যদি কোন এক্সাম থাকে সেটার প্রস্তুতি নিতে পারবেন আর বোনাস হিসাবে থাকছে আপনার নিজের জন্য কিছু সময় যাতে আপনি আপনার অন্য কোন স্কিল ডেভেলপ করতে পারেন।
শিক্ষার্থীদের টাইম ম্যানেজমেন্ট এর ৭টি উপায় -7 Ways of Time Management for Students:
1. খুঁজে বার করুন কোন জিনিসে আপনি অযথা টাইম নষ্ট করছেন - Find out what you are wasting time on
আমরা সারাদিন অনেক ধরনের কাজ করে থাকি তবে আমরা যদি একটু ভালো করে ভেবে দেখি তবে অনেক কাজ আসলে আমাদের সময় নষ্ট করছে। যে কাজগুলো আমাদের মানসিক বা শারীরিক বা ফিনান্সিয়াল ভাবে কোন রকম হেল্প তো করছেয় না বরং আমাদের মূল্যবান সময় আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে। এজন্য যেসব বিষয়ে আপনার নজর দেওয়া উচিত সেগুলো হল• আপনি কি আপনার অতিরিক্ত সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে খরচ করছেন
• আপনি কি আপনার ফোন কল এবং বিভিন্ন মেসেজ প্রিয় মানুষকে দেয়ার ক্ষেত্রে বেশি সময় ব্যয় করছেন যতটা না আপনি পড়া ক্ষেত্রে করছেন বা আপনার কর্ম ক্ষেত্রে করছেন।
• আপনি কি কখনো লক্ষ্য করেছেন যে আপনি অযথা হুদাই ফেসবুক বা অন্য সোসিয়াল মিডিয়াতে স্ক্রল করছেন অথবা ব্রাউজিং করছেন
যাই হয়ে যাক উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবে উপরের সবই কিন্তু আপনার জন্য সময় নষ্ট। কারণ আপনি কোন স্থির লক্ষ্য ছাড়া যদি অযথা এইসবের পেছনে টাইম খরচ করেন তবে সেগুলো হল টাইম নষ্ট করা ছাড়া অন্য কিছু না সেজন্য আপনি একটি লক্ষ্য ঠিক করেন যে কতটুকু সময় আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যবহার করবেন এবং কতটুকু সময় আপনি পড়াশোনার জন্য বা অন্য কোন কাজে খেতে ব্যাবহার করবেন একটি লক্ষ নির্ধারণ করুন।
2. সারাদিনে কি কি কাজ করবেন তার একটি লিস্ট তৈরি করুন - Make a todo list of what to do throughout the day
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে আপনি ঠিক করুন সারাদিন আপনার কি কি করা উচিত তারপর সেখান থেকে বেছে বেছে বের করুন ফোনগুলো আপনার সবচাইতে দরকারি প্রাইমারি ইম্পরট্যান্ট জিনিস। এরপর আপনি যে কাজটি করতে পারেন বেশি প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে কম প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা নামিয়ে আনবেন। এর ফলে আপনি সারাদিনের কাজের একটি তালিকা পাবেন এবং তালিকা ধরে কাজ করলে আপনি অনেক সময় বেঁচে যাবে যেগুলো আপনি এরপর কি কাজ করা যায় এটা ভেবে ভেবে অযথাই নষ্ট করতেন।3. ছোট ছোট কাজ দিয়ে দিন শুরু করুন - Start the day with small tasks
আমরা অনেক সময় একসাথে অনেক বেশি কাজ বা অনেক বড় একটি কাজ শুরু করি যেটা শেষ পর্যন্ত আমরা শ্রেষ্ঠ করতে পারি না বরং সে কাজটি করতে গিয়ে আমাদের কাজ করার প্রতি একটা অনীহা চলে আসে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। সেজন্য আপনি যেটা করতে পারেন পূর্বে আপনি যে সারাদিন একটু টুরিস্ট তৈরি করেছেন সেই লিস্ট কে প্রয়োজনীয় কাজের তালিকা আর মধ্যে থেকে বেছে বের করুন কোন কাজ অল্প সময়ের ভেতর করা যাবে এবং যে কাজ আপনার জন্য করা সহজ এবং সেটে দিয়ে আপনি আপনার দিন শুরু করুন। যেমন ঘুম থেকে উঠে আপনার বিছানা পরিষ্কার করা অথবা দাঁত মেজে নিজেকে পরিপাটি করা যেটা করতে আপনি পছন্দ বোধ করবেন তবে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই সোশ্যাল মিডিয়া স্কোর করতে লাগবেন না এটা আপনার অযথা সময় নষ্ট করবে।4. একটি নির্দিষ্ট সময়ে একের অধিক কাজ করবেন না - Do not do more than one task at a time
ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের একটি স্টাডিতে দেখা গেছে যে যারা একসাথে অনেকগুলো কাজ করে তাদের আইকিউ অনেকটা তাদের সাথে মিলে যায় যারা রাতে ঠিকমতো ঘুমায়নি অথবা ঘুমায় না। এর ফলে দেখা যায় যারা একসাথে অনেক কাজ করতে যায় তাদের কাজের মধ্যে প্রোডাক্টিভিটি কমে যায় এবং তারা সব কাজ গুলিয়ে ফেলেন। সে কারণে আপনি কাজ করার আগে কিছু কাজ করতে পারেন• এমন কোন কাজ আছে যেগুলো আপনাকে আপনার কাজ করা থেকে ডিস্ট্র্যাক্ট করে মনোযোগ সরিয়ে ফেলে যেমন সোশ্যাল মিডিয়া ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস
• আশেপাশের চলা অযথা ডিভাইস এবং অ্যাপ্লিকেশন আপনি বন্ধ রাখতে পারেন যাতে সেগুলো আপনার মনোযোগ কাজ করার সময় টেনে না নেয়।
যদি আপনি এই কাজগুলো করেন তবে আপনি নির্দিষ্ট কোন কাজ করার সময় ডিস্টার্ব হবেন না যেমন আপনি হয়তো পড়াশোনা করছেন এমন সময় টিভির আওয়াজ বা আপনার ফোনের সোশ্যাল মিডিয়ার যে নোটিফিকেশন সেটা আপনাকে ডিস্টার্ব করবে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
5. একটি রুটিন তৈরি করা এবং তার মেনে চলা - Create a routine and stick to it
উপরে সমস্ত কিছু যদি আপনি মেনে চলেন এবং শুধু একদিন মেনে চলেন তবে কিন্তু আপনার জন্য খুব একটা সময় সাশ্রয় করা সম্ভব হবে না কারণ আপনাকে একটি নিয়মিত রুটিন ফলো করতে হবে তবে আপনি কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফলটা বুঝতে পারবেন আপনি একদিন কাজ করলেন তারপর আবার যদি সময় নষ্ট করা শুরু করেন তবে শেষ পর্যন্ত আপনার কোন লাভ হবে না। তবে রুটিন টা মেনে চলার জন্য নিজেকে খুব একটা জোর দেবেন না হয়তো আজকে আপনি দশটা কাজের একটি করলেন কালকে দশটা কাজের দুইটি করবেন এভাবে আস্তে আস্তে কাজ বাড়াবেন তাহলে আপনি প্রত্যেকটা কাজে নিজেকে ধরে রাখতে পারবেন একসাথে যদি সব কাজ করতে চান তবে আপনি সেটা করতে পারবেন না সেজন্য রুটিন তৈরি করুন আস্তে আস্তে ফলো করা শুরু করুন। হঠাৎ করে নিজের জীবনযাত্রা লাইফস্টাইল চেঞ্জ করতে যাবেন না তাহলে আপনি শেষ পর্যন্ত কোনটাই এচিভ করতে পারবেন না।6. কাজের মাঝে ভেবেচিন্তে বিরতি নেওয়া - Taking thoughtful breaks between tasks
অনেক সময় দেখা যায় আমরা সময় সাশ্রয় করতে গিয়ে অনেক সময় কোন ধরনের বিরতি আমরা নিই না। আবার দেখা যায় অনেকে একটি কাজ করতে ঘন ঘন বিরতি নেন আসলে প্রকৃতপক্ষে এই দুইটি কাজের একটিও যুক্তিযুক্ত না। কারণ আপনি যখন ঘন ঘন বিরোত্তি নেন অথবা একেবারে বিরতির না নেন তখন আপনার কাজ করার প্রোডাক্টিভিটি অনেকটা কমে যাবে এবং আপনি একটা কাজ খুব বেশি সময় ধরে করতে পারবেন না ঠিকঠাক আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর বিরতি নিতে হবে কিন্তু আপনি যদি খুব তাড়াতাড়ি বা একেবারেই বিরতি না নেন তবে আপনার কাজের ক্ষেত্রে সেটি খুব খারাপ খেলবে এবং আপনার অযথা সময় নষ্ট করবে। যেটা আপনার সময় ম্যানেজমেন্ট স্কিল কে কোন ভাবেই সাহায্য করবে না উপরন্ত আপনার মূল্যবান সময়টা নষ্ট করবে।7. মাঝে মাঝে কাজ থেকে নিজেকে বিরত দিন - Take time off from work
জীবনে সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আমাদের সব সময় মেনে সময়ের গুরুত্ব বোঝা উচিত সেজন্য সময়ের কাজ সময়ে করা দরকার তবে আমরা অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে নিজেদেরকে সময় দেয়া একেবারেই ভুলে যাই যেটা দীর্ঘ মেয়াদী হিসেবে আমাদের জন্য অনেক ভয়ংকর একটা বিষয়। সেজন্য একটানা দীর্ঘ মেয়াদে কোন কাজ করা আপনার স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য এর জন্য ক্ষতিকর। সেজন্য আপনি কিছু কাজ করতে পারেন• সকালে হালকা কোন কাজের পর হালকা মেডিটেশন করতে পারেন
• নিজেকে একা প্রাকৃতিক কোনো পরিবেশে যেমন আপনার বাসার বাইরে যদি কোন বাগান থাকে বা প্রাকৃতিক কোনো সুন্দর পরিবেশ থাকে সেখানে নিজেকে একটু সময় দিন প্রকৃতির সাথে মিশে যান
• ধর্মীয় কাজে নিজেকে একটু সময় দিন যদি মুসলিম হন নামাজ করবেন এখানে আপনি নিজেকে যেমন সময়টা দিতে পারছেন সেরকম আপনার অন্যান্য কাজ থেকে একটু রেস্ট পাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গুন যা তাদের থাকা উচিত। আমাদের জীবনের সময় অত্যন্ত মূল্য বাণী একটি বিষয়। কথায় আছে সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না কথাটা বাস্তবসম্মত। শিক্ষা অর্জনকালীন সময়ে আমাদের যে জিনিসটা সবচাইতে বেশি দরকার সেটা হলো সময় ব্যবস্থাপনা বা টাইম ম্যানেজমেন্ট। যদি আপনি যদি একজন শিক্ষার্থী হন তবে আপনার অবশ্যই টাইম ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা প্রথম দিকে সময়ের গুরুত্ব ভালোভাবে বুঝতে পারেনা তবে যখন তাদের পরীক্ষা খুব নিকটে চলে আসে তখন তারা বুঝতে পারে সময়ের গুরুত্ব অনেক বেশি কারণ তখন তাদেরকে অল্প সময়ের ভিতরে অনেক বেশি পড়া কভার করতে হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীকে অনেক কাজ করা লাগে পড়াশোনার পাশাপাশি। সেসব মুহূর্তে টাইম ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের সকলের উচিত টাইম ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা রাখ। টাইম ম্যানেজমেন্ট এর জন্য একজন শিক্ষার্থী অনেক ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে যেটি খুব বেশি কঠিন কোন কিছু না। শিক্ষার্থীদের জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট এর পাঁচটি পরীক্ষিত উপায় এখানে উল্লেখ করা হলো যেগুলো একজন শিক্ষার্থী মেনে চললে তার অবশ্যই উপকার হবে।
0 Comments